কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আটোয়ারীর শাহী মসজিদ
প্রকাশিত: ১ অগাস্ট ২০২২, ০৩:১৮ পিএম
পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলের স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম নিদর্শন আটোয়ারীর শাহী মসজিদটি। আনুমানিক ৩৫০ বছরের আগে স্থাপিত এই মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য ও নির্মাণের নিপূনতা এখনো নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। মসজিদটি দেওয়াল জুড়ে নানান কারুকার্য, ইসলামিক টেরাকোটা, ফুলসহ লতা- পাতার খোদাই করা রয়েছে। এর সম্মুখভাগে টেরাকোটার কারুকার্য গুলো একটি সঙ্গে আরেকটির কোন মিল পাওয়া যায় না। মসজিদটির দেওয়ালে ব্যবহৃত ইট গুলো বিভিন্নভাবে অলংকৃত করা রয়েছে।
মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ টির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ফুট ২৫ ফুট। মসজিদটির তিনটি গম্বুজ রয়েছে গম্বুজের চার কোনায় চাকরি মিনার, সামনে রয়েছে তিনটি দরজা। কোরআনের আয়াত সম্বলিত ক্যালিওগ্রাফি তুলির ছোঁয়ায় সুসজ্জিত মসজিদের ভেতরের অংশ। এছাড়া ফুল, লতা পাতার খোদাই করা কার্য বিভিন্ন রঙে, সুনিপুণভাবে সাজানো হয়েছে এই অংশ। এরকম কারুকার্যমান্ডিত মসজিদ আরেকটি চোখে পড়ে না। একটি খোলা জায়গায় রয়েছে মসজিদের সামনে। সুসজ্জিত পাকা তোরণ রয়েছে খোলা জায়গার একপাশে। আকর্ষণীয় ফুল ও লতাপাতা খোদাই করা স্তম্ভ রয়েছে তোরণের উভয় পার্শে।
স্তম্ভের মধ্যে চ্যাপ্টা গম্বুজ আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। একটি পুকুর রয়েছে তোরণের সামনের দিকে। শিশু কিশোর সহ এলাকাবাসী গোসল করতে পারে তোরণের সামনে এই পুকুরে।
মসজিদটির নামকরণ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত।
স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, মালিক নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। ওই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা বলে স্থানীয়রা জানান। মসজিদটি নির্মাণ কাজ শেষ করেন দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি। প্রশ্ন তত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী,শাহী মসজিদটি মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসন আমলে ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করে। মসজিদের মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে পারস্য ভাষায় এর নির্মাণ সম্পর্কে একটি ফলক রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন মুঘল সাহজাদা আজম শাসনকাল ১৬৭৯ সালে নির্মিত ঢাকা হাইকোর্টের প্রাঙ্গনে মসজিদের সঙ্গে নির্মাণ শৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে মির্জাপুর শাহী মসজিদের। সে সময়েই মসজিদটির নির্মাণ কাজ হয় বলে ধারণা অনেকের।
এলাকাবাসী বলে মসজিদটি নির্মাণের প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর হলেও কোথাও কোন উল্লেখযোগ্য ত্রুটি ধরা পড়েনি প্রবল ভূমিকম্পে একসময় মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা অংশ সংস্কারের জন্য ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মালিক উদ্দিন।
ভ্রমণপিপাসুদের মনের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য মির্জাপুর শাহী মসজিদের সুনিপুণ কারুকার্য সৌন্দর্য ও ইতিহাস, ঐতিহ্য এক অনন্য উদাহরণ। তবে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি দেখাশোনার জন্য,স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টিপাত করা জরুরী। এলাকার সাধারণ মানুষের কামনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আরও দর্শনীয় ও কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে।