নব্বই হাজারে ধর্ষককে চেয়ারম্যানের মুক্তি
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২২, ০৭:৪৮ পিএম
নব্বই হাজার টাকায় ধর্ষককে রেহাই দিলো চেয়ারম্যান
ধর্ষককে নব্বই হাজার টাকা জরিমানা করে রেহাই দিলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার ভাল্লকগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকবির হাসান। অথচ ধর্ষণের মামলার স্থানীয়ভাবে কোন সালিশ করার এখতিয়ার নেই। অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে থানা কিংবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট কোন প্রকার অভিযোগ দিতে দেওয়া হয়নি নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে।
অথচ সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার অভিযুক্তকে নব্বই হাজার টাকা জরিমানা ও ৫ টি জুতার বারি দিয়ে ঘটনার “সমাধান” করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ঘটনাটি ঘটে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছী ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে।
ধর্ষিত মেয়ের বাবা পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছী ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, চলতি মাসের ১৪ তারিখ তার সাত বছরের কন্যা শিশুকে পার্শ্ববর্তী কাবুলের বাড়ির পিছনে কচু ও পাট খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে একই এলাকার মৃত কপির কারিগরের ছেলে অপির কারিগর (৪৫)। অভিযুক্ত অপির সম্পর্কে মেয়েটির প্রতিবেশী চাচা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, তার মেয়েকে প্রথমবার ধর্ষণের পর এ বিষয়ে কাউকে না বলার জন্য বলা হয়। বললে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয় ধর্ষক অপির। ভয়ে মেয়েটি কাউকে কিছু জানায় নি। পরবর্তীতে ১৪ জুলাই অপির আবারও তার মেয়েকে ধর্ষণ করতে নিয়ে গেলে তিনি জানতে পেরে কচু ক্ষেত থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন। এ সময়ে ধর্ষক পালিয়ে যায়। পরে তার নির্যাতিত মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এবং নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।
মেয়ের বাবা জানান, ধর্ষনের বিবরণ মেয়ের মুখে শুনে ঠিক থাকতে না পেরে তিনি ধর্ষককে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে বাড়ি ফিরে গোসল করার সময় অপির ও তার সহযোগিরা ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার জন্য গেলে এলাকাবাসীর সাহায্যে তিনি প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরেন। তিনি এবং তার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে জানান।
ধর্ষক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে থানা কিংবা উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করতে না পেরে ভাল্লুকগাছী ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট এই ঘটনার সমাধান চাইলে চেয়ারম্যান বিষয়টি থানা পুলিশের নিকট না পাঠিয়ে নিজে সালিশ করে এর সমাধান করেন বলে জানান মেয়ের বাবা।
অভিযুক্ত অপির সালিশে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
বাবুল হোসেন বলেন, সালিশ বসেছিলো। সালিশে তাকে (অপির) নব্বই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা সে (অপির) সালিশকারকদের হাতে বুঝিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে ১৫ তারিখ শুক্রবার রাত ৯ ঘটিকায় অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাকবির হাসানের নিজ বাড়ির সামনে সালিশ বৈঠক বসে। চেয়ারম্যান তাকবির হাসান সালিশে সভাপতিত্ব করেন। আর সালিশে সকল সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট ব্যক্তি ও এলাকার দালাল নামে পরিচিত আসমত। রায় ঘোষণার সময় অত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুধির চন্দ্র কর্মকার ও উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন।
সালিশে নির্যাতিত মেয়েটির সাক্ষ্য নেওয়া হয় এবং ধর্ষক অপির স্বীকারোক্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে নব্বই হাজার টাকা জরিমানা করেন সালিশদাররা। এরপর সালিশদাররা মেয়েটির পরিবারকে এ ঘটনায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করতে নিষেধ করেন। চেয়ারম্যান একজন সরকারি লোক হয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ধরনের সালিশ করার এখতিয়ার সম্পর্কে জানতে চেয়ারম্যানের মোবাইলে বার বার কল করে তাকে না পেয়ে আসমত এর নিকট মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, হ্যা এই ঘটনায় অভিযুক্তকে নব্বই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে সেই টাকা স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
ধর্ষণের টাকা ভিকটিমের পরিবারকে না দিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সেই টাকা দেয়ার কথা বলে নিজেরাই এই টাকা আত্মস্বাত করেছেন বলে এলাকায় মানুষের মুখ মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
নারী ও শিশু ধর্ষনের ঘটনা গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা করা যায় কিনা এবং মীমাংসা করলে সালিশকারকদের বিরুদ্ধে কি ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী ব্লাস্ট এর সমন্বয়কারী এডভোকেট সামিনা বেগম শিরিন বলেন, নারী ও শিশু ধর্ষনের ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ে কোন সালিশ মীমাংসা করা যাবে না। যিনি করবেন তার বিরুদ্ধে ভিকটিম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন। এতে ল গ্রেফতার ও আইনের আওতায় শাস্তির বিধান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই আইনজীবী।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাওয়ার্দী জানান, নারী ও শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে গ্রাম্য সালিশ কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। তবে এ বিষয়ে তিনি কোন প্রকার অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ধর্ষক এবং সালিশকারকদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।