পলাতক ইউপি চেয়ারম্যানের যত অপকর্ম

আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৬ পিএম


পলাতক ইউপি চেয়ারম্যানের যত অপকর্ম

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দলীয় ভাবে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

এ জন্য তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিস্কার করা হয়। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে যান চেয়ারম্যান। 

জড়িয়ে পরেন জমি দখল, মাদক সেবন, স্ত্রী সন্তান রেখে পরকীয়া প্রেমে।

শুধু তাই নয় পরকীয়া প্রেমিকাকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করানোর ভিডিও এবং অডিও ক্লিপ বেশ কয়েকদিন ধরে ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সর্বশেষ আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে মৎস্যজীবিলীগ নেতা শাকিল আহমেদকে হত্যার অভিযোগে প্রধান আসামী হয়ে ৪০ দিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান। এর মধ্যে বেড়িয়ে আসছে চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার করা অপকর্মগুলো। 

সবসময় সুবিধাজনক অবস্থান খোঁজা রফিকুল ইসলাম ২০০২ থেকে ২০১১ সালে ভানোর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

দল পরিবর্তন করে ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। এরপর দলের সাথে বিদ্রোহ করে ২০২১ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

ভানোর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এক মাস থেকে পরিষদে অনুপস্থিত থাকলেও কার্যত কোনো ছুঁটি নেয়নি রফিকুল। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির অজুহাতে অধিকাংশ সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় সবুর আলী বলেন, প্রতিদিন ইউনিয়নের অনেক মানুষ পরিষদে এসে ঘুরে যাচ্ছে। পরিষদের লোকেরা চেয়ারম্যান না থাকার অজুহাত দিচ্ছে। বলছে চেয়ারম্যান আগে ফিরে আসুক। এখন কতদিনে চেয়ারম্যান আসবেন আর আমাদের কাজগুলো হবে তা বুঝতে পারছি না।

ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে কাছ থেকে প্রচারণা এবং নির্বাচনে বিজয়ী হতে সহযোগিতা করেছে ভানোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আলম।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত বছরের শুরুতে ভানোর হলদিবাড়ী বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের মেয়ে সোহাগী আক্তারের সাথে পরকীয়া জড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নিকট বিষয়টি জানিয়ে দেন যুবলীগ নেতা সাঈদ। এরপর থেকেই চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। 

এ দিকে চার শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল সাঈদ আলম ও হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের মধ্যে।

চেয়ারম্যানের হোটেল ব্যবসায়ীর পক্ষ নিয়ে ওই জমি সাঈদ আলমের কাছ থেকে দখল করিয়ে দিতে এলে দ্বন্দ বেড়ে আরও দ্বিগুন হয়।

এরপরে গত ২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই হলদিবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম দেলোয়ার হোসেন মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করলে তার প্রতিবাদ করে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ। ওইদিন ইমাম ও তার লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হন যুবলীগ নেতা সাঈদ ও তাঁর স্ত্রী। 

এ ঘটনায় সাঈদ আলম চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি এবং বালিয়াডাঙ্গী থানায় শুক্রবার (২ই সেপ্টেম্বর) ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলা দায়েরের জেরে পরের দিন গত ৩ই সেপ্টেম্বর ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের পরিবারের সাথে যুবলীগ নেতা সাঈদ আলমের পরিবারের মধ্যে হলদিবাড়ী বাজারে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ হয়।

এতে গুরুতর আহত হয় ভানোর ইউনিয়নের মৎসজীবিলীগ সভাপতি শাকিল আহমেদ।

পরে তাকে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (৪ই সেপ্টেম্বর) ভোরবেলা তাঁর মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় শনিবার রাতে ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ আরও ২০ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন যুবলীগ নেতা সাঈদ আলম।

মামলার ৪০ দিনে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে ঢাকায় ৪ জন এবং এলাকায় ২ জন কে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। 

মামলার বাদী যুবলীগ নেতা সাঈদ আলম বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই রফিকুল বেপরোয়া পড়েছিল।

এ জন্যই তার সঙ্গ আমি বাদ দিয়েছি। মাদক ব্যবসা, পরকীয়া, জমি দখল এমন কোন অপকর্ম নেই সে করেনি।

আমি তাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছি। অথচ তার হাতেই আমার ভাই খুন হলো। চেয়ারম্যানের পরকীয়া প্রেমের ফোনআলাপ, ওই নারীকে দিয়ে মাদক ব্যবসা এবং জমি দখলের ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। চেয়ারম্যান পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকার লোকজন তার শাস্তি চায়। 

এদিকে গত ৫ অক্টোবর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা। তিনি জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এটি করা হয়েছে। 

মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের উপরিদর্শক সুলতান আলী বলেন, আমরা ৭ই অক্টোবর নথিপত্র বুঝে পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছি। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ওসি স্যার সহ গিয়ে স্বাক্ষী এবং স্থানীয়দের জবানবন্দি রেকর্ড করেছি। 

Link copied