জীবন যুদ্ধে হার না মানা নার্গিস বেগম

মোঃ রুবেল মিয়া, নবীনগর

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:১৮ পিএম


জীবন যুদ্ধে হার না মানা নার্গিস বেগম

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার নবীনগর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত নাজিম উদ্দীন ও ফাতেমা বেগমের ৬ কন্যা সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান নার্গিস বেগম।

জীবন সংগ্রামে বিজড়িত নবীনগর সদর বাজারের হার না মানা একজন সাহসী সবজি বিক্রেতা নারী নার্গিস বেগম (৩৫)। ব্যক্তি জীবনে তিনি ১ পুত্র সন্তানের মা।

জানা যায়,২০০৪ সালে একমাত্র উপার্জানকারী পিতার মৃত্যু হওয়ার পর  ২ মাসের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী বিবাহিত নার্গিস বেগম সংসারের হাল ধরেন।

পিতার দেখানো পথে হাঁটছেন দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে। মা, ৫ বোন ও ১ ছেলে সন্তান নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

শিশু সন্তান সানী, ৫ ছোট বোন ও মাকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিয়ে দিয়েছেন ৪ বোন শামসুন্নাহার বেগম, কামরুন্নাহার বেগম, বদরুন্নাহার বেগম, নাজমুন্নাহার বেগম কে।

সবার ছোট বোন আফরোজা বেগম এখন নবীনগর মহিলা (ডিগ্রি) কলেজে, বিএ (সম্মান)/ডিগ্রি  তে পড়াশোনা করছেন।

কিন্তু সময়ের অভাবে নিজের সন্তানকে সময় দিতে না পারায় তাকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হয়েছে।

নার্গিস বেগম জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর মা-বোনদের টানে ১৭ বছর বয়সে নিরুপায় হয়ে তিন মাসের কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করি।

এই করুণ পরিস্থিতির মধ্যে আমার স্বামীও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমাদের নবীনগরে অনেক সহৃদয়বান ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

দিশেহারা পরিবার ও স্বামীর এই রকম আচরনে প্রথমে খারাপ লাগলেও আমার একমাত্র সন্তান, মা-বোনদের দিক তাকিয়ে সব ভুলে গিয়ে আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

করুণার পরিস্থিতিতে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে অটল ছিলাম। আমাকে বাজারের অনন্য ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করেন। তাদের সব সময় বিপদে-আপদে পাশে পেয়েছি।

আত্মবিশ্বাসী লোক দেখানো সহানুভূতির ভয়ে একান্তে থাকা নার্গিস বেগম করুণা ও সাহায্যের বদলে এখন কেবল সবার কাছে দোয়া চান। তিনি যেন সততা ও সুনামের সাথে ব্যবসা করে বাবা স্মৃতিকে ধরে রাখতে পারে।

নার্গিস বেগমের মা ফাতেমা বেগম বলেন আমার মেয়ে নার্গিস না থাকলে আজ আমাদেরকে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের কাছে হাত পাততে হত।

আমি দোয়া করি আমার মেয়ে সুস্থ এবং সব সময় ভালো থাকুক। করুণ পরিস্থিতিতে তার নিজের জীবনকে বাজি রেখে যেভাবে আমাদেরকে আগলে রেখেছে সত্যিই একটা ছেলের পক্ষেও এত পরিশ্রম করা সম্ভব হত না।

পাশ্ববর্তী কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন ধরে নার্গিস বাজারে ব্যাবসা করে আসছে। তিনি আমাদের বাজারের প্রথম নারী ব্যবসায়ী।

দীর্ঘদিন ধরে সুনাম ও সততার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তার মতো পরিশ্রমী মেয়ে আর হয় না। এমন মেয়ে যেন সব পরিবারে জন্মায়। এমন মেয়ে পরিবারে থাকলে দুঃখ, কষ্ট পালাবে। 

নিয়মিত কয়েকজন ক্রেতা বলেন,আমরা উনার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত বাজার সদাই করি। উনার ব্যবহার ও সততা আমাদের মুগ্ধ করে।

আমরা সব সময় আমাদের ছেলে-মেয়েদের নার্গিস বেগমের কথা বলে অনুপ্রাণিত করি। উৎসাহ দেই। সে নবীনগর এমনকি সারা বাংলাদেশের নারীদের জন্য আইডল।

তারা আরো বলেন, নবীনগরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করবো,নার্গিস বেগমকে যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যেন নার্গিস বেগমের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ও সাহসী উদ্যোক্তার জীবন সহজ ও সুন্দর হয়।

Link copied