বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কমিটির অভিযোগ

জেপুলিয়ান দত্ত জেপু, চকরিয়া

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০১:০৪ এএম


বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কমিটির অভিযোগ

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন বিগত ২০১৯ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মুরাদ দাবী করেন।

বিগত ম্যানেজিং কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মুরাদ এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

বিধি লঙ্গন করে বিনা কারণে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের নামে ব্যাংকের চলিত হিসাব থেকে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় অর্থ উত্তোলন করেছেন।

যার কোনো প্রকার ভাউচার ও ব্যায়ের ব্যাখ্যা রেজুলেশন খাতায় উল্লেখ নেই।

উত্তোলিত ও দৈনিক কালেকশনের এ অর্থ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যয়ের কোনো খাতও দেখাননি বলেও জানান,ম্যানেজিং কমিটির অন্যতম হেভিয়েট শিক্ষানুরাগী সদস্য নুরুচ্ছফা।

এ ধরণের মোটা অংকের অর্থ উত্তোলন করে খরচের খাত না দেখিয়ে বছরের পর বছর অর্থ লোপাট করার তথ্য প্রমাণ বর্তমান কমিটির হাতে রয়েছে বলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানালেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিদ্যালয়ের কালেকশনের টাকা প্রতিনিয়ত ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রায় সময় অফিস সহকারীর কাছ থেকে দৈনিক কালেকশনের টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার সময় নিয়ে যেত।

এছাড়া ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ও শিক্ষার্থী থেকে কালেকশন করা আয়ের এ যাবৎ ২৭ লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারেনি।

এ পর্যন্ত আয়কৃত প্রায় ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৫৯ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দেখালেও ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ের কোন হিসাব দেখাতে পারে নি।

এছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের ১৪ লক্ষ টাকা ভুয়া ভাউচার বানিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় ম্যানেজিং কমিটির সীদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহিন মুরাদ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, চকরিয়ার বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার ২০১২ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর ২০২২ সালের সেপ্টম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি দীর্ঘ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিগত কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত অর্থ ও বিভিন্ন খাতের আয় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

এদিকে, ঐতিহ্যবাহী বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের পদে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব বিধিমোতাবেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের উপর বর্তায়।

যার ফলে যোগদানের প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠতা অর্জন করেন শিক্ষক মোসলে উদ্দিন মেহেরী।

তারই প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মোসলে উদ্দিন মেহেরীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন।

এ ব্যাপারে সিনিয়র শিক্ষক আবু ছিদ্দিক জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হয় না। আসলেও দুপুরেরে আসে। বিরতির পরপরই বিদ্যালয় ত্যাগ করে চলে যান।

বিগত বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকের বকেয়া বেতন প্রধান শিক্ষক নিজেই শ্রেণি কক্ষে গিয়ে আদায় করে বিদ্যালয়ের রসিদমূলে জমা দেয় নাই।

এভাবে বছরের পর বছর অনিয়মভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নিলেও কোনো শিক্ষক মুখ খুলতে পারেনি তৎতকালীন ম্যানেজিং কমিটির ভয়ে।

এবার বর্তমান ম্যানেজিং(পরিচালনা) কমিটির ন্যায় ও বলিষ্ট ভূমিকার জন্য বিদ্যালয়টি ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আশা করছি।

এ ব্যাপারে বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২৬ বছর ধরে শিক্ষকতা করে এখনও একটি বাড়ী করতে পারিনি।

এ বছর বাড়ি নির্মাণ করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে অর্থ সংকটে পড়তে হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য ব্যাংকে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে জনতা ব্যাংক থেকে নিজ নামে ২ লক্ষ টাকা,বদরখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধু রসিদের নামে ২ লক্ষ টাকা,ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ৫ লক্ষ টাকা, কালব থেকে ৩ লক্ষ টাকা পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যালয় কল্যান সমিতি থেকে ১ লক্ষ, স্ত্রীর ভাইয়ের (শালা) কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।

জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে এ ঋণ নিয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও পৈত্রিক সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে এক লক্ষ টাকা ও ২ টি দোকান বন্ধক দিয়ে এক লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি নির্মাণে নামছি। এ নিয়ে মোট ২২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি।

বিদ্যালয় ফান্ড থেকে ৪১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠার ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে এ ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফেসিলিটিস ডিপার্টমেন্টের ২য় তলা নির্মাণ, বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের এক রুম ও দুই রুম বিশিষ্ট দুটি ভবনের নির্মাণ করতে বিভিন্ন খাতে ৪১ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের কাছে ব্যায় রসিদ সহ হিসাব আছে বলে দাবী করেন। 

Link copied