ভারতে থাকা সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগ

ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ অগাস্ট ২০২২, ০৭:৫৫ পিএম


ভারতে থাকা সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগ

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজ মর্জিমাফিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা সহ বিভিন্ন অনিয়মের পাহাড় পরিমাণ অভিযোগ উঠেছে রিঙ্কু মজুমদার নামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ৮-৯ বছর ভারতে থাকা, যাওয়া-আসা, স্কুল চলাকালীন সময়ে নিজ মর্জিমাফিক আসা না আসা,শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি সুকৌশলে মেরে খাওয়া,স্কুল সভাপতিকে নিজের পক্ষে রেখে সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দ তছরুপ করা সহ নানান অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

এই প্রধান শিক্ষক নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত রয়েছে। হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ( সাবেক চরকিং) ইউনিয়নে অবস্থিত চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদারের অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকান্ডের জন্য ঐ বিদ্যালয়টিতে দেখা গেল সম্পূর্ণ এক ভিন্ন চিত্র। কয়েকবছর ধরে প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদারের বিরুদ্ধে উঠে আসছে বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ। সে অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেলে ১০.১৫ মি.ও দেখতে পায়নি প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন সহকারী শিক্ষক'কে। রূপ কুমার নামের সহকারী শিক্ষকই কেবল পতাকা উত্তোলন সহ কচিকাঁচা শিশু শিক্ষার্থীদের সামলাচ্ছেন। দেরিতে আসার পর প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদার ইনিয়েবিনিয়ে নানান অযুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে এই প্রতিবেদক'কে চা খেতে বলেন এবং টাকা এক হাজার দেয়ার জোর চেষ্টা চালান। যখন বলি আপনার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কথা না বলে তার জন্য মাস্তানি ফি কত খরচ করেছেন.. ?

স্কুলের স্থানীয় সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক মহল সহ প্রতিষ্ঠাতা বাড়ির লোকজন প্রধান শিক্ষক এই রিঙ্কু মজুমদারের সকল অনিয়ম- দুর্নীতির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগ্রে দেন।

স্থানীয় সাবেক শিক্ষার্থী মনোয়ারা, আফসানা অভিভাবকদের মধ্যে মিলি রাণী,প্রেমিকা, সুধাংশু, জগন্নাথ, পরিক্ষিত, ইব্রাহীম ওরপে মাস্টার সহ অনেকে তার অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন । কয়েকজনে জানান, এখানে ছেলেফেলেদের না পড়িয়ে স্কুলে কাজ করাতো, এর কারনে এখানকার অধিকাংশরাই লেখাপড়া করেনি। তারা জানান, প্রধান শিক্ষক কয়েকবছর ধরে নানান অযুহাতে তাদের থেকে টিপ- সই নিতেন, কারন জিজ্ঞেস করলে বলতো টাকা দিবে। কেউ বলেন, আগে যারা তার বিরুদ্ধে বলেছে, তাদেরকে স্কুলের টিউবওয়েল থেকে পানি নিতে দেয়না, স্কুলের মাঠে আসতে দেয় না।

রিঙ্কু মজুমদার উপজেলার উত্তর চরঈশ্বর(দাসপাড়া) এলাকার সাবেক সহকারী শিক্ষক বারন্ড দাসের স্ত্রী। সে স্বামী-সন্তান নিয়ে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করছেন বলে জানা যায়। কাগজে কলমে ৫জন শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলটিতে বর্তমানে শ'খানেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

স্কুলের অফিস রেকর্ডে দেখা গেছে, রিঙ্কু মজুমদার গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ১ মাসের মেডিক্যাল ছুটি নিয়ে এ বছরের ৩০ মে পর্যন্ত কাটান। করোনার আগেও কর্মস্থলে না থেকেও ছিলেন মর্মে মাসিক রিপোর্টও জমা দিয়েছিলেন তিনি। ভারতে থাকা, যাওয়া-আসার এমন চিত্র চলে আসছে ৮-৯ বছর ধরে।

তার এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ বছরের জুন মাসের বিভিন্ন তারিখে জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ ( ২২,জুন- বাংলাদেশ প্রতিদিন'এর শিরোনাম ' ভারতে বসবাস করেও নয় বছর বেতন নিচ্ছেন হাতিয়ার শিক্ষক', ২ জুন, 'দৈনিক সংগ্রাম প্রতিদিন'- ' স্কুল শিক্ষক থাকেন ভারতে, বেতন তুলছেন বাংলাদেশ থেকে, ২০ জুন- hatiakantha.com ' থাকেন ভারতে, বেতন নিচ্ছেন হাতিয়া থেকে ', দৈনিক পূর্বকোন সহ অনেকগুলো পত্রিকায়) - এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে, রিপোর্ট প্রকাশের পরই সে দেশে এসে পুনরায় শিক্ষা বিভাগের ইশারায় জুন মাসের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহন করে আবার আগের মতো নিজ মর্জিমাফিক স্কুল ডিউটি চালান, যেনো তার এ বেপরোয়া রীতি নিয়মেই পরিনত হয়েছে।

জানা যায়, আগে অনিয়ম- দুর্নীতি করতো তার বোন জামাই ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবুর ছত্রছায়ায়। আর এখন করছেন অর্থের বিনিময়ে জেলা- উপজেলার কর্তামহলের দ্বারা।

সর্বোপরি বিষয়ে এই ক্লাস্টারের দায়িত্বরত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষকের মর্যাদা কাকে বলে ওরা তা জানেনা, রিঙ্কু মজুমদারের বিরুদ্ধে আগেও পত্রিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অথচ এখনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আরও বলেন তার বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দিয়েছি, এখন দেখি বিভাগীয় মামলা হয় কিনা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম কে পূর্বে অবগত করানো হলে সে বলেছিলেন ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাবে, সে কার সহযোগিতায় এ অনিয়ম করছে আমি তা খতিয়ে দেখছি। অথচ এ পর্বে জানতে চাইলে তিনি দায়সারা কথা বলেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনসুরুল্যাহ শিবলিকে স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের এহেন বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অবগত করানো হলে তিনি বলেন, আমি খতিয়ে দেখে জানাব।

Link copied